মহাকুমা শহরে প্রথম ১৮৮৩ সালে টেলিগ্রাম চালু এবং ১৯৭২ সালে সাব পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়। সরিষাবাড়ীর পিংনায় এরও আগে টেলিগ্রাম ও পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়। একসময় মহাকবি কায়কোবাদ পিংনা পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার ছিলেন। এখানে অবস্থান কালেই তিনি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “মহাশ্মশান” রচনা করেন। ১৯০৫ সালে ধনবাড়ীর জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অর্থানুকূল্যে কাব্যগ্রন্থটি প্রথম মুদ্রিত হয়। সরিষাবাড়ীর পিংনা এক সময় ছিল ব্যস্ত নদীবন্দর। পিংনা নদী বন্দর থেকে সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কলকাতার সাথে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো। বৃটিশ আমলে পিংনাতে ফৌজদারী কোর্ট, মুনসেফ কোর্ট, আদালত, বড় বড় পাটের কুঠি, শিা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ছিল। যমুনা নদীর তীরবর্তী অবস্থিত পিংনার সাথে ততকালীন রাজধানী কলকাতা শহরের সরাসরি স্টিমার যোগাযোগ ছিল। নারায়ণগঞ্জের সাথেও পাট ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল এই পিংনা। অন্যান্য স্থানের পাট ব্যবসায়ীরা এই নদী বন্দর ব্যবহার করে এবং এখানকার পাট ক্রয়ের সিল দিয়ে মণ প্রতি দশ টাকা বেশি আয় করতো। শিা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে জামালপুর জেলা যখন অন্যান্য জেলা গুলোর চেয়ে অনেক গুণ পিছিয়ে, শিক্ষার আলো থেকে এ অঞ্চলের মানুষ যখন বঞ্চিত নিগৃহিত, ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলা সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতা নগরকেন্দ্রিক শিক্ষা সাংস্কৃতিক পীঠস্থানের শিল্প সাহিত্যের ঢেউ এসে পড়েছিল এই পিংনাতে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সর্ব সাধারণের মিলিত প্রচেষ্টায় ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পিংনা হাই স্কুল স্থাপিত হয়। তখন এর অবস্থান ছিল বর্তমান পিংনা স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের সন্নিকটে। যার উত্তর পাশে অবস্থিত ছিল বিরাট আদালত ভবন। ১৯০৭ সালে শ্রী শশী মোহন চৌধুরী বিদ্যালয়টিকে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত করেন। তাঁর অকান্ত প্রচেষ্টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদান প্রাপ্তি হয় স্কুলটি। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ ১৯০৬ সালে পিংনা হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ১৯১২ সাল পর্যন্ত এখানে অধ্যয়ন করেন। সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ প্রথম মুসলমান ছাত্র যিনি পিংনা হাই স্কুল থেকে এন্ট্রাস (বর্তমান এস.এস.সি) পাশ করেন। “বাতায়ন” নামক গ্রন্থে তিনি পিংনা তথা পিংনা হাই স্কুলের অনেক স্মৃতির কথাই উল্লেখ করেছেন। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক ১৯৩৯ সালে পিংনা হাই স্কুল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে সফর সঙ্গী ছিলেন হোসেন সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিম উদ্দিন ও মৌলভী তমিজ উদ্দিন খান প্রমুখ। ঐতিহ্যবাহী সেই পিংনাতে আজ আর সেই কোর্ট নেই, মুনসেফ আদালত নেই, সেই মানুষ নেই, সেই ব্যস্ততা নেই, সেই নদী বন্দর নেই। যেখানে বসে কবি কায়কোবাদ কাব্য রচনা করেছেন, যে মসজিদের আযানের ধ্বনি শুনে তিনি বিখ্যাত আযান কবিতা রচনা করেছিলেন সেই সুপ্রাচীন মসজিদটি আজ যমুনা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হবার উপক্রম। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর স্মৃতি বিজড়িত পিংনা হাই স্কুল।
আর জানুন বর্তমান টাংগাইলের ভূয়াপুর, গোপালপুর, ধনবাড়ী ও জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানা পিংনা থানার অধিন ছিল।
Ads5
আর জানুন বর্তমান টাংগাইলের ভূয়াপুর, গোপালপুর, ধনবাড়ী ও জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানা পিংনা থানার অধিন ছিল।
Ads6